UNPUBLISHED BENGALI LETTERS WRITTEN BY SRI ANIRVAN

UNPUBLISHED BENGALI LETTERS WRITTEN BY SRI ANIRVAN

সূফীবাদ
শ্রীমত অনির্বান

Mystic ক়ে বাংলায় বলে মরমীয়া I. ধরম আর মরমে তফাত করেছেন এ দেশের সহজিয়ারা I. সূফীরাও তেমনি শরীয়ত আর হকীকাতে তফাৎ করেছেন.I শরীয়ত বাইরের বিধি বিধানে প্রকাশ পায়, যেমন বৈষ্ণবের বৈধীভক্তিতে I.হকীকাত বিশ্বমর্মগ্রাহী -- যেমন বৈষ্ণবের রাগমার্গে I. প্রেম সূফী ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ I. প্রেমে দেওয়ানা হওয়া -- ঈশ্বর প্রেমে উন্মত্ত হওয়া -- এই থেকে mysticism এর উত্পত্তি I, আসলে mysticism হচ্ছে ,যা অতীন্দ্রিয় তাকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যবত প্রত্যক্ষ করা --তত্ত্বদৃষ্টিতে বা ভাবের দৃষ্টিতে I.
মনে কর , ঈশ্বরবিশ্বাস I. সবারই তা কিছু কিছু আছে. I কিচ্তু সে অনুভব সবার কাছে তো ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ এর মত সহজ বা স্বাভাবিক নয়.I চৈতন্য মহাপ্রভু কৃষ্ণপ্রেমে পাগল হয়ে গেলেন --তার 'জাঁহা জাঁহা দৃষ্টি পড়ে,তাঁহা তাঁহা কৃষ্ণ স্ফুরে.' I এই অতীন্দ্রিয় অথচ প্রত্যক্ষ এবং মার্মিক অনুভূতি , এই হল mystic অনুভূতি.I রামকৃষ্ণের অনুভূতি ও mystic অনুভূতি I.সূফীরাও অনেকে ঈশ্বর প্রেমে মত্ত হয়ে তাকে সর্বত্র অনুভব করতেন I. এ অনুভব ইন্দ্রিয় বোধের চাইতে ও তীখ্নো I. আর এই হল mysticism এর প্রাণ I.


সুফি মত টাই একটা mystic approach to Reality ওটা mysticism হতে আলাদা কিছু নয় I.
সব ধর্মের ই একটা বহিরঙ্গ আর একটা অন্তরঙ্গ দিক থাকে I.সূফীমত হল ইসলামের অন্তরঙ্গ দিক I. বহিরঙ্গ নিয়ে ধর্মে ধর্মে লাঠালাঠি আছে-- হিন্দু মুসলমানে লাঠালাঠি টা স্রেফ এই নিয়ে. I সব হিন্দু বা অধিকাংশ মুসলমান যদি সূফী হন, তাহলে দুটি ধর্মের মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে এই বেদনাদায়ক হানাহানিটা থাকত না I.
ছেলেবেলায় পূর্ববঙ্গের সাধারন মুসলমানদের মুখে এমন সব কথা শুনেছি, যা বড় হয়ে জেনেছি সূফীবাদেরই অঙ্গ I. অথচ এমনটি পশ্চিমে দেখিনি I. হিন্দুর যোগ আর বেদান্ত আর মুসলমানের সূফীবাদ দুই এসে মিলতে শুরু করেছিল বাংলার বাউলদের মধ্যে I.বাউলদের যদি ভাল করে বুঝতে পার , তাহলে সূফীবাদের মর্মে প্রবেশ করতে পারবে I.
প্রবল ঈশ্বরানুরাগ -- এই হল সূফীবাদের গোড়ার কথা I. কিন্তু এ অনুরাগ রূপের প্রতি ততটা নয় , যতটা অরূপের প্রতি I. অনুরাগের কথা ভাবতে গিয়ে হিন্দু রূপের কথা না ভেবে পারেন না I. আর সূফী রূপ মানলেও ভাবকে তার উপরে স্থান দেন I. দুয়ের তফাত টা এত মারাত্মক নয় I. প্রমান মেলে সূফী কাব্য আর বৈষ্ণব কাব্যের তুলনা করলে I.

সূফী নামটির ব্যুত্পত্তি নিয়ে মতভেদ আছে I. কেউ বলেন ,. তার মূল হচ্ছে 'সফা' (পবিত্রতা ) Iঅতএব তিনি ই সূফী যিনি পার্থিব সব মালিন্য থেকে মুক্ত I. কেউ বলেন 'সফ ' (উচ্চপদ ) থেকে সূফী , কেননা সূফীরা ঈশ্বর প্রেমিকদের মধ্যে অগ্রণী I, আবার কেউ বলেন ,সূফীরা বড় গরিব ছিলেন , কেননা সর্বস্ব ত্যাগ করাই ছিল তাদের ধর্ম I. তাই গরিব মুসলমানের যেমন মসজিদএর বাইরে 'সুফ্ফা ' বা বেঞ্চে রাত্কাটাতেন ঘরের অভাবে , এরাও তাই করতেন, তাই এদের নাম হয়েছিল সূফী I. কিন্তু এসব ব্যুত্পত্তির কোনটাই ভাষাতত্ত্বের দিক কয়ে যুক্তিসহ নয় যদি ও ভাবের দিক দিয়ে আপত্তি করার কিছু ই নাই I. সূফীদের সম্বন্ধে সর্ব প্রাচীন গ্রন্থকার আল -সরহাজ বলেন , আসলে শব্দটি এসেছে 'সূফ ' থেকে, যার অর্থ হল পশম I. ইসলামের প্রথম দু শতাব্দী ধরে এই সব সূফীরা ক্রিশ্চান সন্ন্যাসীদের মত পোশাক পরতেন , তাইতে ফরাসিতে তাদের বলা হত 'পশমিনা সূফ ' বা পশমের পোশাক পরা I. তাই থেকে তাদের নাম হয়েছে সূফী. আধুনিক পন্ডিতেরা সূফী শব্দের এই ব্যুত্পত্তি ই মেনে নিয়েছেন I.
প্রথম সূফীরা তাহলে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীর মতন ই থাকতেন --এইটি লক্ষনিয়. সূফীবাদের গোড়ায় তাহলে আমরা পাচ্ছি একটা তীব্র বৈরাগ্যের প্রেরণা I.কিন্তু এই বৈরাগ্যের মূলে যদি প্রেম না থাকে তাহলে তা আত্ম্পিরনে পর্যবসিত হয় I.সূফী বৈরাগে হয়েছেন ঈশ্বর প্রেমে. ঈশ্বরের প্রেমে দেওয়ানা হয়ে যাঁরা 'ধর্মের উপর মরম' ক়ে স্থান দিয়েছেন (আমি বাংলার সহজিয়াদের পরিভাষা ব্যবহার করছি)I, সেই মরমিয়ারাই সত্যকার সূফী .আজকাল আমরা সূফী বলতে এই মরমিয়াদেরই বুঝি I. বছর তিনেক আগে আমিই দিল্লিতে একজন কাশ্মিরি সূফীর সংস্পর্শে এসেছিলাম. ইনি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মথুরা বৃন্দাবন ইত্যাদি সব তীর্থে তীর্থে ঘুরলেন I. আমরাও তাঁকে আমাদের একজন বলে মন্দিরে পর্ষন্ত ঢুকিয়েছি I. দেখেছি, কৃষ্ণের নামে তাঁর চোখ দিয়ে জল পড়ছে I.সমস্ত গোড়ামির উর্ধে ধর্মের বিশ্বজনিনতায় এইযে ঐকান্তিক শ্রদ্ধা ,সর্বত্র ঈশ্বর - দর্শনএর এই যে মর্মগত তাই হল সূফী ধর্মের প্রাণ I



DEHRI -ON -SONE

30 . 1 .36





ভাই হীরেন,

ভাই, এই কথাটি প্রাণে প্রাণে বুঝিতে পারিতেছ যে আমাদের অহং বুদ্ধির মাঝে ই আমরা অহর্নিশ ডুবিয়া রহিয়াছি , তাঁহারই মাঝে চলিতেছি, ফিরিতেছি, অথচ প্রতি মুহুর্তে সেই অখন্ড আনন্দ স্বরূপ হইতে নিজেকে পৃথক করিয়া একটা অকর্মান্যা দাম্ভিক আমাকে খাড়া করিয়া রাখিয়াছি I এই যে অনন্ত বায়ু - সমুদ্রে আমরা ডুবিয়া রহিয়াছি একি তার ই নি:স্বাস নয় ! এই ক্ষুদ্র প্রাণ সেই অনন্ত প্রানের একটি ক্ষুদ্র তরঙ্গ নয় ? এই যে চেতনা, তার ই অনন্ত জ্যোতির একটি কিরণ নয় কি ? অথচ প্রতি পদে তাঁহাকে অস্বীকার করিয়া বড় হইয়া দাঁড়াইয়াছে আমাদের এই "অহং" I তার সঙ্গে যে কতবড় বিচ্ছেদ, কি মর্মান্তিক বিরহ তাহাওকি আর বুঝাইয়া বলিতে হয় ?

উপায় কি ? যে পথেই যাই না কেন, দেখিয়াছি ঋষির উপদেশ - "শান্ত উপাসীত ' - শান্ত হইয়া উপাসনা করিবে I তার স্বরূপ তোমনের বিকার নয়, কল্পনা দিয়া তো তাঁকে ধরা যায় না I সমস্ত তাঁহাকে সপিয়া দিয়া শান্ত হইয়া অনন্ত সত্তায় যদি আমরা ডুবিয়া যাই , প্রতি নি:শ্বাসে যদি অনুভব করি মাতৃ গর্ভস্থ ভ্রুণের মতো তাঁহারই সত্ত্বা হইতে প্রাণ আহরণ করিয়া বাঁচিয়া আছি, আমি তার অনুতে অনুতে নি:শ্বাস্সে নি:শ্বাসে আমি তাঁর - তখন তিনিই - স্নিগ্ধ জ্যোতিতে তাঁহাকে ফোটাইয়া তোলেন আমাদের হৃদয়ে I তখন বুঝি , এই চোখ হইয়াছে বাহিরের বস্তু দেখিবার জন্য নয়, তাঁহাকে দেখিবার জন্য, এই স্পর্শানুভুতি তাঁহাকে বুকে জড়াইয়া ধরিবার জন্য I তপ্ত বালুতে বারি বিন্দুর মতো তিনি আমায় শুষিয়া নেন I

ভাই !এই প্রশন্ত অন্তর্মুখীনতা টুকু আগে I তারপর এই ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত থাকিয়াই কর্ম, কর্ম তখন সত্য আনন্দময় I কেননা এতো তারই কর্ম I আমি ও তো তাঁরই খেলার সাথী I

তুমি যে বলিয়াছ, সবাইকে তাঁহার কাছে টানিয়া আনিতে প্রবল ইচ্ছা জাগিয়াছে, ইহাও সত্য I এ যুগে তাঁহার ইচ্ছা এই ভবে বিচ্ছুরিত হবে I "সকলের তরে সকালে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে "জানিও , ওই কথা I "শান্ত উপসীত "-শান্ত হও প্রশান্তি স্বাভাবিক , সূর্য কিরণের মতো I প্রভাতের কিরণ যেমন করিয়া ফোটে ......................হৃদয়ের ঠাকুর সবার হৃদয় ফুটাইয়া তুলিবেন I মুখে বলার চেয়ে ........অন্তরের যোগ I জেনো চুম্বকের আকর্ষণ - বাইরে দেখা যায় না ,কিন্তু ভিতরে টান পড়ে I ভাই তুমি তোমার ঠাকুর ঘরটি তপস্যার বির্জ্যে পূর্ণ করিয়া তোল , তপস্যা ঘনীভূত হউক - বিকিরণ স্বাভাবিক ও অনায়াসে I লীলা দেখিয়া অবাক হইয়া যাইবে I লীলা তাঁর ই- অতএব তা অনায়াসে আমাদের মতো ছটফটানি তো নয় I তোমাকে দিয়া তিনি অনেক kAj করাইয়া লইবেন I তাই বলি তাঁহার হাতে একেবারে যন্ত্র বত শান্ত হইয়া যাও I যন্ত্রীর ই শক্তি, তিনিই চালান I মনে, কর,মিস্ত্রির হাতের যন্ত্র ,যদি ইচ্ছা সংযুক্ত হয়, নড়ে চড়ে নিজের ইচ্ছা মতো,তাহা হইলে কি বিপদ !আমরা তাঁহার হাতে যন্ত্র মাত্র - অর্থাৎ শান্ত , কিন্তু অচেতন যন্ত্র নই - পূর্ণ মাত্রায় সচেতন যন্ত্র - তার আলোতে আলোময় I সচেতন বটে কিন্তু স্বাধীন ইচ্ছা নাই - জীয়ন্তে মরা I অথচ অলস নই , জড় নই , লোভী নই -অর্থাৎ আমির বালাই নাই I

তোমদের নির্ব্বাণানন্দ